জন্মদিনে নেই উৎসব, মায়ের শোক বয়ে বেড়ান ওমর সানী

নব্বইয়ের দশকে ঢাকাই সিনেমার রুপালি পর্দায় ঝড় তোলা নায়ক ওমর সানী। আজ ৬ মে তার জন্মদিন। তবে এই দিনটি তার জীবনে আর উৎসবের উপলক্ষ হয়ে ওঠে না। আনন্দের দিন হয়ে ওঠে বিষাদের। কারণ, এই মাসেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন তার মা। তাই হৃদয়ের গহিনে আজও রক্তক্ষরণ ঘটে এই দিনে।

নিজের অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে ওমর সানী বলেন, "আজ আমার জন্মদিন। এই দিনে আমাকে আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। এই দিনেই আমি পৃথিবীতে এসেছি। দিনটি আমার জন্য অনেক আনন্দের আবার অনেক কষ্টের। কারণ, এই মাসেই আমার মা মারা গেছেন। তাই এই মাসটা আমার কষ্টের, এ কারণেই আমি কোনো আয়োজন রাখি না।"

তবে ভালোবাসার মানুষদের শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা তিনি ফেলতে পারেন না। নিজের রেস্তোরাঁয় কর্মীদের সৌজন্যে জন্মদিনের একটি কেক কাটবেন তিনি। পাশাপাশি সম্প্রতি একটি প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে নতুন পথচলা শুরু করেছেন, সেখানেও সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দেবেন।

এই মুহূর্তে জীবনের আরেকটি অধ্যায় পার করছেন তিনি—পরিবারকেন্দ্রিক অধ্যায়। স্ত্রী, দেশের আরেক প্রিয়মুখ মৌসুমী রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে। অসুস্থ মা আর বেড়ে ওঠা কন্যা ফাইজার পাশে থেকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। মৌসুমীর দেশে ফেরার বিষয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও, ওমর সানী জানালেন, "এই মুহূর্তে মৌসুমীর দেশে ফেরার সম্ভাবনা নেই। বরং আমি হয়তো সব কাজ গুছিয়ে তাদের কাছেই চলে যাব।"

স্মৃতির পাতায় ফিরে তাকালে দেখা যায়, ১৯৯২ সালে নুর হোসেন বলাইয়ের পরিচালনায় ‘এই নিয়ে সংসার’ সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় পা রাখেন ওমর সানী। এরপর উপহার দিয়েছেন ‘চাঁদের আলো’, ‘দোলনা’, ‘কুলি’, ‘অন্তরে অন্তরে’র মতো অসংখ্য জনপ্রিয় সিনেমা। কখনো রোমান্টিক নায়ক, কখনো দুর্দান্ত অ্যাকশন হিরো, আবার খলনায়ক হিসেবেও মন জয় করেছেন তিনি।
১৯৯৬ সালে ভালোবেসে জীবনসঙ্গিনী বানান সিনেমার আরেক উজ্জ্বল নক্ষত্র মৌসুমীকে। তাদের এই জুটিকে এখনও বাংলা চলচ্চিত্রের সফল দম্পতি হিসেবে দেখা হয়। সংসারে তাদের এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে, যারা তাদের সুখের গাঁথায় যোগ করেছে নতুন রং।

জন্মদিনে নেই আলোর ঝলকানি, নেই উচ্ছ্বাসের সুর। কিন্তু হৃদয়ের গভীরে ওমর সানীর এই দিনটি আজও বয়ে আনে জীবনকে নতুনভাবে উপলব্ধির সুযোগ। একদিকে প্রিয়জনের শোক, অন্যদিকে জীবনের নতুন বাঁক—এই দ্বন্দ্ব নিয়েই এগিয়ে চলেছেন নব্বই দশকের এই সিনেমা-নায়ক।